জানা গেছে, স্ত্রীর দেওয়া নারি নির্যাতনের মামলায় সাজাভোগ করেছিলেন স্বর্ণের কারিগর সুমন ধর, সেখানে পরিচয় হয় তিন সিঁধেল চোরের সঙ্গে। কারাগারে বসেই তারা পরিকল্পনা করেন স্বর্ণ চুরির।
কিছু দিন পর তাদের সবার জামিন হয়। তবে যোগাযোগ ছিল প্রতিনিয়ত। ওই তিনজনকে হাত খরচ দিয়ে সুমন প্রলুব্ধ করতেন সোনার গহনা চুরি করতে। চট্টগ্রামে একটি চুরির মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সাড়ে তিন মাস পর এ চক্রের সন্ধান পায় পুলিশ।
ওই চারজনকে গ্রেপ্তারের পর হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের আদ্যপান্ত জানতে পারেন বলে জানান কোতোয়ালি থানার ওসি নেজাম উদ্দিন। গ্রেপ্তার চারজন হলেন- আব্দুল আজিজ (৩৩), মো. বশির ওরফে বশর (৪৮), সুমন ধর (৩৬), ও সুমন সাহা (৩৩)।
ওসি নেজাম বলেন, গত বছরের ১ অক্টোবর নগরীর ফিরিঙ্গি বাজার জেএম সেন স্কুল গলির একটি ভবনে চুরি হয়। সে বাসা থেকে বিভিন্ন ধরনের ৩৯ ভরি অলঙ্কার চুরি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চোরদের বহনকারী সিএনজি অটো রিকশা শনাক্ত করে চালক মো. মুছাকে গ্রেপ্তার করে। মুছার কাছে চোরদের শারীরিক গঠন সম্পর্কে জানা গেলেও নাম-ঠিকানা জানা যায়নি।
ওসি নেজাম বলেন, “শারীরিক গঠন জেনে আমরা সোর্স নিয়োগ করি এবং আজিজকে শনাক্ত করি। নিশ্চিত হয়ে মঙ্গলবার কর্ণফুলী থানার দক্ষিণ কূল এলাকা থেকে আজিজকে এবং তার স্বীকারোক্তিতে ইছানগর থেকে বশিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
“তারা দুই জনই জানিয়েছে, স্বর্ণ কারিগর সুমন ধরের কাছে তারা স্বর্ণগুলো বিক্রি করেছে। বিভিন্ন সময়ে সুমন তাদের টাকা দিয়ে সহায়তা করে চুরির জন্য।”
এরপর বায়েজিদ বোস্তামী এলাকা থেকে সুমন ধরকে গ্রেপ্তারের পর গত বুধবার আদালতের অনুমতি নিয়ে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।
ওসি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সুমন ধর জানান সে স্বর্ণ গলিয়ে তিনি হাজারি গলিতে সুমন সাহা নামে একজনের কাছে বিক্রি করছেন। এরপর রাতেই সুমন সাহাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের কাছ থেকে জানা যায়, গ্রেপ্তার আজিজ ও বশর পেশাদার চোর। ২০১৮ সালে তারা দুজন এবং তাদের সহযোগী ওসমান চুরির মামলায় কারাগারে যান। ওই সময়ে স্ত্রীর করা নারী নির্যাতনের মামলায় কারাগারে ছিলেন সুমন ধর।
ওসি নেজাম বলেন, “কারাগারে পরিচয়ে সুমন ধর তাদের চুরি করা মালামাল কিনে নেওয়ার আশ্বাস দেয়। পরে সবাই কারাগার থেকে জামিনে বের হলে যোগাযোগ ছিল নিয়মিত। এসময় সুমন তাদের টাকা দিত এবং স্বর্ণ চুরির জন্য নিয়মিত প্রলুব্ধ করত।
“বশর, আজিজ, ওসমান বিভিন্ন এলাকায় রেকিং করে বাসা শনাক্ত করত এবং সুযোগ বুঝে চুরি করে স্বর্ণগুলো সুমন ধরের কাছে বিক্রি করে দিত।”
ওসি নেজাম আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, জেএম সেন স্কুল গলির ওই বাসা থেকে একটি সিন্দুক ও একটি আই ফোন চুরি করেন তারা। নদীপথে তারা নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে সিন্দুকটি কাটেন এবং সিন্দুকের কাটা অংশ ও মোবাইল ফোনটি নদীতে ফেলে দেন।
“সিন্দুক থেকে স্বর্ণগুলো নিয়ে ইছানগরে বশরের বাসায় রাখে সেখান থেকে সুমন ধরকে ফোন করে। সুমন এসে তার বাসা থেকে স্বর্ণালঙ্কারগুলো নিয়ে যায় বলে জানা যায়।”