১৯৬০ সালে ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা লাভ করা দেশ ‘সেনেগাল’-এর অবস্থান আটলান্টিক মহাসাগরের পূর্ব কিনারায়। দেশটির রাজধানী ডাকার প্রধান নদী বন্দর ও বদ্বীপ হিসেবে পরিচিত।
৯৪ ভাগের বেশি মুসলিম অধ্যুষিত দেশটির জনসংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ। এক লক্ষ ছিয়ানব্বই হাজার সাতশত বাইশ বর্গকিলোমিটারের দেশটির মুসলমানরা শুধু নামেই মুসলিম নয়; বরং তারা যথেষ্ট ধার্মিক। ধর্ম চর্চায় সেনেগাল এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সময়ের ব্যবধান ৫ ঘণ্টা।
সেনেগালের স্বাধীনতা দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দাঁড়িয়ে প্রতি ৩ মিনিটে ১ বার কুরআনুল কারিম খতম করা হয়। কুরআনুল কারিমের এ আয়োজন দেশটির অনন্য এক বৈশিষ্ট্য।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কুরআনুল কারিম খতম করার মাধ্যমে পালিত হয় স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সেনেগালের জাতীয় ঐতিহ্য এটি। প্রতি বছর ৪ এপ্রিল কুরআনুল কারিম খতম করার মাধ্যমে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে দেশটি।
সেনেগাল- পশ্চিম আফ্রিকার দেশ। আটলান্টিক মহাসাগরের পূর্ব কিনারায় রাজধানী ডাকার অবস্থান। সেনেগাল নদী থেকে দেশটির নামকরণ করা হয়। নদীটি সেনেগালের পূর্ব ও উত্তর সীমান্তে বহমান। পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর; উত্তরে মৌরিতানিয়া, পূর্বে মালি এবং দক্ষিণে গিনি ও গিনি-বিসাও। তাছাড়া গাম্বিয়ার উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ সীমানা সেনেগালের সঙ্গে সংযুক্ত।
সেনেগালের ভাষা
সেনেগালের সরকারি ভাষা ‘ফরাসি’। প্রায় ৩৫ শতাংশ লোকের মাতৃভাষা ‘ওলোফ’। প্রায় ৪৫ শতাংশ লোক দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ওলোফ–এ কথা বলতে পারেন। এছাড়াও দিওলা, ফুলাকুন্দা, মালিংকে, সেরের এবং সোনিংকে ভাষা উল্লেখযোগ্য। তবে আন্তর্জাতিক কাজকর্মে ব্যবহার হয়- ফরাসি ভাষা।
সেনেগালের স্বাধীনতা দিবস ৪ এপ্রিল। এ দিন তারা প্রতি তিন মিনিটে একবার কুরআনুল কারিম খতম করেন। উপস্থিত থাকেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি।
অনুষ্ঠানে কুরআন তেলাওয়াতে আগ্রহীদের আগে থেকেই বাছাই করা হয় এবং ১ পৃষ্ঠা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এভাবে ২/৩ মিনিটে একবার খতম দিতে প্রয়োজন হয় ৬০০ মানুষের। সেনেগালে প্রচলিত কুরআনের কপিগুলো ৬০০ পৃষ্ঠায় সমৃদ্ধ। এক সঙ্গে ৬০০ লোক যার যার নির্ধারিত পৃষ্ঠাটি তেলাওয়াত করেন। মাত্র ২/৩ মিনিটের মধ্যেই প্রত্যেকে যার যার পৃষ্ঠা তেলাওয়াত করতে সক্ষম হন। আর এ অনুষ্ঠান উদযাপনের সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি দাঁড়িয়ে থাকেন।
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী উপস্থিতিতে কুরআনুল কারিম খতম করা দেশটির অনন্য ঐতিহ্য। যার ফলে মর্যাদা ও সম্মান দিক থেকে অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত সেনেগাল।
দেশটিরে জনসংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ। মুসলিম ৯৪ ভাগ। তাদের অধিকাংশই ধার্মিক। মুসলমান ছাড়া খ্রিস্টান ৫ ভাগ। আর অন্যান্য ধমের্রর মানুষ রয়েছে ১ ভাগ। দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি।
দেশটির আয়তন
আটলান্টিক সমুদ্র তীরবর্তী দেশটির আয়ত- এক লক্ষ ছিয়ানব্বই হাজার সাতশত বাইশ বর্গ কিলোমিটার। দেশটির অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করে।
সেনেগালের রাজধানী ‘ডাকার গ্র্যান্ড মসজিদ; দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থাপনা। দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি ডিজাইন করেছেন ফরাসি এবং মরক্কোর স্থাপত্যবিদরা।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর আফ্রিকা অঞ্চল থেকে সেনেগালই সর্ব প্রথম স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। সেনেগালের রাজধানী ডাকারে বাংলাদেশের দূতাবাস থাকলেও বাংলাদেশে সেনেগালের কোনো দূতাবাস নেই।