গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার মো. আব্দুল হামিদ শেখের জন্ম ১৯১০ সালের ২৪ আগস্ট। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাল্যবন্ধু তিনি। মাঠে একসঙ্গে ফুটবল খেলেছেন।
টুঙ্গিপাড়ার অজপাড়া গাঁয়ের সেই খোকা, খোকা থেকে শেখ মুজিব, তারপর নির্যাতিত জাতির মুক্তির দূত বঙ্গবন্ধু, সেখান থেকে জাতির পিতা এবং সেই ধারাবাহিকতায় বিশ্বনেতা হয়ে ওঠা এক রাজনীতিককে তিনি দেখেছেন অনেক কাছ থেকে। হামিদ শেখের বাড়ি টুঙ্গিপাড়ার শ্রীরামকান্দি গ্রামে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জিটি স্কুলেই পড়তেন তিনি। তবে এক ক্লাসে নয়। তবুও তাকে কাছ থেকে দেখেছেন। সেই ছোট বয়সেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন সহপাঠীদের মধ্যমণি। শ্রীরামকান্দি গ্রামের বাড়িতে বসে বাল্যবন্ধুর জন্মের শতবর্ষে তার স্মৃতিচারণে হামিদ শেখ বলেন, বঙ্গবন্ধু লাঠিখেলা দেখতে ভীষণ পছন্দ করতেন। গরিব সহপাঠীর বই হারিয়ে গেলে তিনি নিজের বই ওই বন্ধুকে দিয়েছেন। এলাকার মানুষের অভাবে কৌশলে বাবা-মায়ের চোখ এড়িয়ে নিজেদের গোলার ধান দিয়ে এসেছেন।
বঙ্গবন্ধুর বাবা-মা এগুলো বুঝতেন। সন্তানের এমন উদারতা এবং পরোপকারী মানসিকতায় তারাও বাধ সাধেননি। হামিদ শেখ বলেন, প্রধানমন্ত্রী হয়ে টুঙ্গিপাড়ায় এসেও অতি সাধারণভাবে চলাফেরা করতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কোনো প্রকার নিরাপত্তা নিয়ে চলাফেরা করতেন না। সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে তাদের সমস্যার কথা শুনতেন এই বিশ্বনেতা। বঙ্গবন্ধু যখন লঞ্চে করে টুঙ্গিপাড়ায় আসতেন, নদী তীরে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করতো। করবেই বা না কেন, তাদের প্রিয় মুজিব ভাই আসছেন যে! হামিদ বঙ্গবন্ধুর জনসভা দেখতে যেতেন। মল্লিকের মাঠের জনসভায় তিনি একসঙ্গে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে দেখেছেন। তারাও বঙ্গবন্ধুকে ভীষণ স্নেহ করতেন। বঙ্গবন্ধুর পাশে থাকার আহ্বান জানাতেন। তিনি বলেন, তখনকার সময় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও অন্তরিকতা ছিল।
এমনকি মুসলিম লীগের খান এ সবুরকে সম্মান দিয়ে কথা বলতেন। যা এখনকার রাজনীতিতে দেখে যায় না। এমন সোনার মানুষ আর হবে না। বয়সের ভারে বেশিরভাগ সময়ই চোখ বুজে থাকেন হামিদ শেখ। এই চোখ বুজেই তিনি যেন স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান। স্মৃতিচারণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু মানুষের দুঃখ-দুর্দশা শুনে বলতেন, দেশ একদিন স্বাধীন হবেই ইনশাআল্লাহ। বলতেন, এ দেশে কোনো অভাব থাকবে না, আমি সবার মুখে হাসি ফোটাতে চেষ্টা করব। এ কথাগুলো যেন হামিদ শেখের কানে এখনো বাজতে থাকে।