নারায়ণগঞ্জের একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থান বাবুল চন্দ্র দাস নামে এক হিন্দু ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভুল তথ্যের কারণে তাকে মুসলমান হিসেবে জানাজা ও দাফন করা হয়েছে।
যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে তারা রোগীর স্বজনদের খোঁজ করে পাননি তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর কারো সঙ্গে যোগাযোগ করেনি বলে দাবি তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা নারায়ণগঞ্জের গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সৈকত হোসেনের।
এদিকে রোগীর মৃত্যুর কিছুক্ষণের মধ্যেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফন করা একজন কাউন্সিলরকে ফোন করে জানান, করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হবার ভয়ে রোগীর মরদেহ তার কোনো স্বজনরা নিতে চাচ্ছেন না। তাকে যেন দ্রুত দাফন করা হয়। পরে সেই অনুযায়ী তার মরদেহ জানাজা শেষে দাফন করা হয়।
নারায়ণগঞ্জের গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সৈকত হোসেন যিনি রোগীকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্দ হন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাজে। রোগীর মৃত্যুর সংবাদ দিলে তারাই রোগীর দাফন সৎকার করতেন বলে জানান। একই সঙ্গে আক্ষেপ প্রকাশ করেন এবং এর উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
গত শনিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে এ হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকা করোনা রোগী বাবুল চন্দ্র দাস মারা যান। সেদিন দুপুরে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এম এ বাশার জানান, আমরা হাসপাতালের এন্ট্রিবুক চেক করে দেখেছি সেখানে রোগীর নাম লেখা ছিল বাবুল, বয়স পঞ্চাশ। হাসপাতালে সৈকত নামে একজন তাকে নিয়ে আসলেও ভর্তির পর থেকে আর কেউই আসেনি এবং কেউ তার কোনো খোঁজ খবরও নেননি। ফতুল্লা থানাধীন সৈয়দপুর এলাকায় তার বাড়ি বলেই ঠিকানায় লেখা ছিল। মৃত্যুর পর রোগীর পরিবারকে অবহিত করার জন্য বার বার ফোন দেওয়া হলেও তখন কেউই যোগাযোগ করেননি।
পরিবার করোনায় আক্রান্ত হবার ভয়ে মরদেহ নিতে চাচ্ছিলেন না এটি পরে জানা গেছে। তাই মরদেহ দাফনের জন্য কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকুকে আমরা জানাই। পরে তিনিই মরদেহ দাফন করেন।
নাসিক ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু জানান, আমরা হাসপাতালের রেকর্ডে মৃত ব্যক্তিকে মুসলমান হিসেবেই উল্লেখ করা দেখেছি। তাই আমরা মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করেছি। মরদেহ গোসল করানোর সময় আমরা মৃত ব্যক্তির খৎনা করা দেখতে পাই। বাবুল দাসকে হাসপাতালে নিয়ে আসা গোগনগর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সৈকত হোসেন বলেন, বাবুল চন্দ্র দাস ছয় বছর ধরে আমাদের এলাকার খোকন মণ্ডলের দর্জি দোকানে কাজ করত। পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই বললেই চলে। সে দোকানে ঘুমাত, হোটেলে খেত। গত ১৪ এপ্রিল বাবুল অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা তাকে মহাখালী নিয়ে যাই চিকিৎসা করাতে। সেখানে পরীক্ষা করে জানা যায়, তার করোনা পজিটিভ। এরপর তাকে ১৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। ভর্তির সময় আমরা তার নাম বাবুল চন্দ্র দাস বললেও এন্ট্রি খাতায় লেখা হয় শুধু বাবুল।
গত রোববার প্রথম আমরা তার মৃত্যুর খবর পাই। পরে যখন হাসপাতাল থেকে আমাকে ফোন করা হয়, তখন মরদেহ দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই যদি আমাদের ফোন দিতো তাহলে এই সমস্যা হতো না। আর মরদেহ সৎকারের ব্যবস্থাও আমরা করতাম।
বাবুলের খৎনা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রাকৃতিকভাবেই তার খৎনা করা ছিল। বাবুল দাসের সঙ্গে তার স্ত্রীর ১০-১৫ বছর ধরে সম্পর্ক নেই বলে জানা গেছে।
হাসপাতাল সুপার ডা. বাশার জানান, বাবুল করোনা পজিটিভ জানার পর থেকেই তার পরিবার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। যেদিন বাবুল মারা যান, সেদিন বারবার তার পরিবারকে ফোন দেওয়া হয়। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় পরে সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করি। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলেই এ কনফিউশন তৈরি হয়েছে।