বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে আটকে যাওয়া ২০২১ সালের মাধ্যমিক বা এসএসসি এবং এবং ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসি পরীক্ষার সম্ভাব্য একটি সময়সূচি ঘোষণা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে চলতি বছরের নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসএসসি এবং ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া হবে। এই পরীক্ষা হবে শুধুমাত্র তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে। তবে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, আইসিটি, ধর্মের মতো আবশ্যিক বিষয় বা চতুর্থ বিষয়ের ওপর পরীক্ষা হবে না বলে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ও মূল্যায়ণের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেন দীপু মনি। তবে কোভিড পরিস্থিতি যদি অনুকূলে না থাকে, তাহলে গত বছরের মতো এবারও বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ণ করা হবে বলে তিনি জানান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এমন পরিস্থিতিতে এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে অ্যাসাইনমেন্ট এবং পূর্ববর্তী পরীক্ষাগুলোর বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়নের মাধ্যমে। এসএসসি-র ক্ষেত্রে ২৪টি অ্যাসাইনমেন্ট এবং এইচএসসি-র ক্ষেত্রে ৩০টি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। এসব অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের পুরোটা কভার করা হবে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে যদি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হয়, তাহলে এসএসসি-র ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে দুইটি করে টানা ১২ সপ্তাহে মোট ২৪টি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। প্রতিটি বিষয়ে ৮টি করে অ্যাসাইনমেন্ট করবেন শিক্ষার্থীরা। ১৮ই জুলাই থেকে এসএসসির অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া শুরু হবে। অন্যদিকে, এইচএসসি-র ক্ষেত্রে তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের মোট ৬টি পত্র রয়েছে। প্রতিটি পত্রের জন্য ৫টি করে মোট ৩০টি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। সপ্তাহে ২টি করে মোট ১৫ সপ্তাহে এই ৩০টি অ্যাসাইনমেন্ট দেবেন শিক্ষার্থীরা। ২৬শে জুলাই থেকে এইচএসসির অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া শুরু হবে। গত বছর এই অ্যাসাইনমেন্টের মূল্যায়ণের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এবারে এ বিষয়ে বিশেষ নজরদারি করা হবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। এবারও যদি অ্যাসাইনমেন্টে স্বচ্ছতা নিশ্চিত না হয়, তাহলে শুধুমাত্র সাবজেক্ট ম্যাপিং অর্থাৎ পূর্ববর্তী পরীক্ষার বিষয়-ভিত্তিক মূল্যায়ণ করা হবে বলে তিনি জানান। দীপু মনি বলেন, পূর্ববর্তী জেএসসি-জেডিসি-এসএসসির সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের ভিত্তিতে এবং অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে এসএসসি-এইচএসসির মূল্যায়ন করা হবে বলে তারা চিন্তাভাবনা করছেন।
অ্যাসাইনমেন্ট মূলত নেয়া হবে এটা ভেবে যে শিক্ষার্থীরা যেন তাদের পরীক্ষার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে পারেন। অন্যদিকে, আবশ্যিক বিষয়গুলোর মূল্যায়ণ হবে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত যে পরীক্ষাগুলো হয়েছে বা এসএসসি পর্যন্ত যে মূল্যায়ণ হয়েছে তার ভিত্তিতে। এগুলোর ওপরে আলাদা করে পরীক্ষা বা অ্যাসাইনমেন্ট নেয়া হবে না। পরীক্ষা বা অ্যাসাইনমেন্টের জন্য শুধুমাত্র গ্রুপভিত্তিক নৈর্বাচনিক বিষয় যেমন: বিজ্ঞান গ্রুপের ক্ষেত্রে পদার্থ বিজ্ঞান, রয়াসন, জীববিজ্ঞান বা উচ্চতর গণিত বেছে নেয়ার কারণ হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন,বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো মূল্যায়ণের প্রয়োজন থাকায় তারা নির্দিষ্ট ওই কয়েকটি বিষয়ের ওপরেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কুরবানীর ঈদের পর এইচএসসির ফরম পূরণ অনলাইনে শুরু হবে, তাই কোন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হবে না। অল্প বিষয়ে, সীমিত সময়ে, সীমিত নম্বরে পরীক্ষা নেওয়া হবে, তাই পরীক্ষার সময় এবং পরীক্ষার ফিও কম নেওয়া হবে। ফি পরিশোধ করতে হবে অনলাইনে। ফর্ম কবে দেয়া হবে, ফি কতো হবে এ বিষয়ে বোর্ড থেকে নির্দেশনা দেয়া হবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন।