শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ মাসুম বিল্লাহ বগুড়ার বিয়ের প্রলোভনে প্রেমিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে রাকিবুল ইসলাম রাকিব (২৫) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে।বুধবার (১৮ আগষ্ট) দুপুরে রাকিবকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে একই দিন সকালে ভুক্তভোগী মেয়ে নিজে বাদী হয়ে সদর থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। গ্রেফতার রাকিব শেরপুর উপজেলার বেলঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম রফিকুল ইসলাম।এ তথ্যগুলো নিশ্চিত করে সদর থানার এসআই জাকির আল আহসান।এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী মেয়েটি সনাতন ধর্মাবলম্বী। প্রায় পাঁচ বছর আগে রাকিবের সাথে তার পরিচয় হয়। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে রাকিব তাকে মুসলিম ধর্মের অনুসারী বানিয়ে বিয়ে করার প্রলোভন দেন। এতে মেয়েটি রাজি হন। এর পর থেকেই রাকিব তার সাথে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করা শুরু করেন। বগুড়ার শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাসাভাড়া নিয়ে সেখানে তাকে রেখে শারীরিক সর্ম্পক করতেন রাকিব।এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, দুই বছর আগে সদরের জহুরুলনগর এলাকায় ভুক্তভোগী মেয়েটিকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নেন রাকিব। ওই বাড়িতে শুধু মেয়েটি একাই থাকতেন। আর রাকিব মাঝে মাঝে এসে তার সঙ্গে সময় কাটাতেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার বিকেলে রাকিব এই বাসাতে যান। সেখানে গিয়ে মেয়েটিকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন। ওই সময় মেয়েটি তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। একপর্যায়ে মধ্যরাতে কৌশলে বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন রাকিব। ওই সময় মেয়েটি বাড়ির মালিক ও প্রতিবেশিদের বিষয়টি জানান। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে রাকিবকে গ্রেফতার ও মেয়েটিকে উদ্ধার করে।
এসআই জাকির আল আহসান বলেন, রাকিবকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। আর ভুক্তভোগী মেয়েটির মেডিকেল রিপোর্টের জন্য তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে । উল্লেখ্য, শেরপুরে স্ত্রীর মর্যাদা ফিরে পেতে (২ আগষ্ট) অনশনে বসেছিল হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হওয়া মেয়েটি। প্রায় ৩/৪ বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যানে তাদের দু’জনে পরিচয়। তারপর স্ব-শরীরে দেখাশোনা, আলাপচারিতায় প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়।প্রেমিক রাকিব প্রেমের রাজ্য হাবুডুবু খেতে থাকে। এমনই এক প্রেমিক যুগলের খবর পাওয়া গেছে বগুড়ার শেরপুর এলাকায়। প্রেমিক রাকিবুল হোসেন রাকিব শেরপুর উপজেলার বেলঘড়িয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে ও প্রেমিকা বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার জামির বাড়িয়া গ্রামের মেয়ে। এভাবে দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক কয়েক বছর চলে আসলেও নিজেরা পৃথক (সনাতন ও মুসলিম) ধর্মের অনুসারী হওয়ায় অনেকটা বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তাদের প্রেমের শেষ পরিণতি বিয়ের পিঁড়িতে বসতে।
এরই প্রেক্ষিতে নিজেকে সনাতন ধর্মের অনুসারী হয়েও প্রেমের বলি হতে সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয় প্রেমিকা ।পরে ওই মেয়ে প্রেমিকের কথামতো গত ১৯ আগস্ট বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে জেলা নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে নিজধর্ম (সনাতন) ত্যাগ করে মুসলিম ধর্ম গ্রহন করে নিজে মোছাঃ নিপা আক্তার নামে পরিচয় দিতে থাকে। ধর্মান্তরিতের পরে গত ২৩ আগস্ট একইভাবে জেলার নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে আরেক এফিডেভিটের মাধ্যমে ফেসবুক প্রেমিক রাকিবুল হোসেন রাকিবকে বিয়ে করে। তারপর থেকেই তারা প্রেমিক যুগল (বিবাহিত) বগুড়া শহরের একটি ভাড়া বাসায় কয়েকমাস যাবত বসবাস করে আসছিল।তাদের প্রেমের বিয়ের ঘটনার প্রায় ১ বছর পার না হতেই ধর্মান্তরিত নিপা আক্তারের কপালে নেমে আসে কালো মেঘ। প্রেমিক রাকিব তার প্রেমিকাকে রেখেই তার নিজধর্ম (ইসলাম) এর মহিপুর জামতলা এলাকায় সকল তথ্য গোপন করে আরেকটি অনারস পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে করে বাড়ীতে আনে।
এ খবর পেয়ে ওই প্রেমিকা নিপা আতে ওই মেক্তার ১ আগস্ট রোববার বিকালে তার স্বামীর বাড়ী শেরপুর শহরের দুবলাগাড়ীস্থ বাসভবনে স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে অনশন শুরু করে। এদিকে তার স্বামীর বাড়ীর লোকজন ওই মেয়েকে মারপিট করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এর প্রেক্ষিয়ে নিপা আক্তার স্থানীয় লোকজনের কাছে বিচার চেয়ে সমাজসেবক আমিনুল ইসলামের কাছে আশ্রয় নেয়। খবর পেয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে অসহায় ও ধর্মান্তরিত মেয়ে নিপা আক্তার তার সাথে কোটিপতির ছেলে রাকিবের প্রেম ও বিয়ে নামের প্রতারণার কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন। করুণ আর্তনাদে ভূক্তভোগী ওই মেয়ে নিপা আক্তার বলেন, আমি এখন ধর্মান্তরিত, হিন্দু সমাজেও তো আমাকে নিবেনা, তাহলে কোথায় যাবো? আমার সর্বস্ব লুট করে নিয়েছে কোটিপতির লম্পট ছেলে রাকিকুল হোসেন। সুষ্ঠ বিচার না পেলে এমনকি স্ত্রীর মর্যাদা না দিলে আমার মৃত্যু ছাড়া কোন উপায় নাই। তাছাড়া প্রেমিক রাকিব সম্প্রতি আরেক মেয়েকে বিয়ে করেছে এমন খবর পেয়েই প্রেমিকের বাড়ীতে অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি বিচার পেতে আইনের আশ্রয় নেয়।এ বিষয়ে স্থানীয় সমাজসেবক ও হাট ইজাদার ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, ধর্মান্তরিত হওয়া ওই মেয়েটির পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজনের কাছে ফিরে গিয়ে আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দিয়েছি। বিষয়টা অমানবিক ও অভিনব প্রতারণা!