তাহিরপুর প্রতিনিধি : রোকন উদ্দীন সুনামগঞ্জ। করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধের পর খুলে দেওয়ায় পর্যটকদের আগমনে মুখরিত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী টাঙ্গুয়ার হাওর, পাহাড়ঘেঁষা টেকেরঘাটে অবস্থিত শহীদ সিরাজ লেক, বারেকটিলা যা লোকমুখে প্রকৃতির কন্যা হিসাবে পরিচিত। চলমান মহামারি করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় দীর্ঘদিনের লকডাউন ও স্থানীয় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় পর্যটকদের আগমন বন্ধ থাকলেও চলতি সপ্তাহে পর্যটন স্পটগুলো উন্মুক্ত হওয়ার সাথে সাথে তাহিরপুর উপজেলায় পর্যটকদের আগমন ঘটতে থাকে। সপ্তাহব্যাপী পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত টাঙ্গুয়ার হাওর শহীদ সিরাজ লেক বারেকটিলা যা পর্যটকদের আকর্ষণ যেনো দিন দিন বেড়েই চলেছে। শহীদ সিরাজ লেকটির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে পর্যটকদের ।
বাংলার ‘কাশ্মীর’ খ্যাত মেঘালয়ের পাহাড়ঘেঁষা এ লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা টেকেরঘাটে ভিড় করছেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজারো পর্যটক। নয়নাভিরাম এ লেকের পাশেই রয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সিরাজের সমাধি। ২০১৮ সালে তৎকালীন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম শহীদ সিরাজের নামে এ লেকের নামকরণ করেন। স্থানীয়রা জানান, শহীদ সিরাজ লেকটি মূলতঃ টেকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পের পরিত্যক্ত কোয়ারি। ১৯৪০ সাল থেকে এ কোয়ারি থেকেই চুনাপাথর সংগ্রহ করে ছাতকের আসামবেঙ্গল সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে পাঠানো হতো। ১৯৪৭ সালে এ কোয়ারির সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৬০ সালে টেকেরঘাটে ৩২৭ একর জমিতে চুনাপাথরের সন্ধান পায় বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ। ১৯৬৬ সালে মাইনিংয়ের মাধ্যমে এখান থেকে পাথর উত্তোলন করা হয়। পরে লোকসান দেখিয়ে কোয়ারিটি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর দীর্ঘদিন ধরে পানি জমে কোয়ারিটি লেকে পরিণত হয়। স্থানীয় বাসিন্দা আবুল বাশার খাঁন নয়ন জানান, আগত পর্যটকেরা লেকের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে নিজেদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আপলোড করায় পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
ঢাকা থেকে শহীদ সিরাজ লেক দেখতে আসা দর্শনার্থী সাইফুল ইসলাম জানান, শহীদ সিরাজ লেকে ধারণকৃত হানিফ সংকেতে’র জনপ্রিয় ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠান দেখে লেকটির সৌন্দর্য সরেজমিনে দেখতে এসেছি। শহীদ সিরাজ লেক দেখতে আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাকিব হাসান জানান, ভারতের মেঘালয় পাহাড়, সবুজ বনানী, উঁচু-নিচু টিলা এ লেকের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ইচ্ছে থাকলেও অনেকেই এখানে আসতে পারেন না।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: রায়হান কবির জানান, সীমান্তবর্তী শহীদ সিরাজ লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই পর্যটকদের আনাগোনা রয়েছে। তবে মহামারি করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বর্তমানে পর্যটকদের আগমনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।