রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি : শাকিল মন্ডল রাঙ্গামাটির কিংবদন্তী জাতীয় দলের ফুটবলার বরুণ দেওয়ানের পথ অনুসরণ করলেন বিলাইছড়ি দুর্গম এলাকার মিতুল মারমা। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই জাতীয় ফুটবল দলের ২৩ সদস্যের দলে কোচ জেমি ডে’র গুডবুকে ঢুকে গেছেন মিতুল মারমা। তবে জাতীয় দলের অভিজ্ঞ গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকো ও শহিদুল আলম সোহেলকে বাদ দিয়ে তার খেলা খুবই কম। তার পরও আসন্ন তিন জাতি ফুটবল প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দলে সরাসরি জায়গা করে নেয়ায় রাঙ্গামাটির মানুষের মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে।
তবে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি থেকে উঠে আসা এই তরুণ গোলকিপার এখানেই থেমে থাকতে চাইছেন না। লক্ষ্য তার বহু দূর। স্বপ্ন ছিল একসময় লাল-সবুজ জার্সি গায়ে জড়িয়ে আগামী দিনে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখতেন মিতুল মারমা। দেখতে দেখতে সেই স্বপ্ন এখন বাস্তবের কাছাকাছি। তাই নিজের সর্বোচ্চটা নিংড়ে দিতেও কার্পণ্য নেই তার।
কিরগিজস্তানগামী বাংলাদেশ দলে একমাত্র মিতুল মারমাই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী থেকে উঠে আসা ফুটবলার। তবে আপাতদৃষ্টিতে সহজ মনে হলেও তার এই পথচলাটা পাহাড়ি অঞ্চলের মতোই দুর্গম। বাবা সংঘ মারমা ও মা মিলেচ চাকমার ছোট সন্তান মিতুল। অন্য তিন ভাই ফুটবলের পথে পা মাড়াননি। কিন্তু মিতুলকে বাল্যকাল থেকে কেন জানি ফুটবলই খুব টানতো।
কৃষক পরিবারের সন্তান হয়েও সেদিকে না ঝুঁকে ফুটবল নিয়ে পড়ে থাকাটা মিতুলের কাছে ছিল নেশার মতো। স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক শান্তজিৎ তনচংগ্যার হাত ধরে ফুটবলে তার যাত্রা। শুরুটা হয় বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক স্কুল ফুটবল দিয়ে। এরপর একে একে ঢাকার তৃতীয় ও দ্বিতীয় বিভাগের পর বর্তমানে প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলে উত্তর বারিধারার হয়ে গোলপোস্ট সামলাচ্ছেন সুচারুভাবে। মাঝে বয়সভিত্তিক অনূর্ধ্ব-১৫ ও ১৯ দলে খেলার অভিজ্ঞতাও হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় নেপালে তিন জাতি প্রতিযোগিতায় অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে ডাক পেলেও এবার সরাসরি ২৩ জনের জাতীয় স্কোয়াডে জায়গা করে নিয়েছেন! মিতুলের কাছে পুরো বিষয়টি স্বপ্নের মতো। মনে হচ্ছে এখনও ঘোরের মধ্যেই আছেন। সেই অনুভূতির কথাও বলেছেন , ‘এভাবে সরাসরি জাতীয় দলে জায়গায় পাবো কখনও কল্পনা করিনি। আমার স্বপ্নই ছিল জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি সেই স্বপ্ন পূরণ হবে তা অকল্পনীয় ছিল।’ অবশ্য স্কোয়াডে থাকলেও সেরা ১১ জনের মধ্যে থাকাটা কঠিনই। যেখানে আনিসুর রহমান জিকো ও শহিদুল আলম সোহেলের মতো অভিজ্ঞ গোলকিপার আছেন। সেই বাস্তবতা মানছেন মিতুল, ‘তারা তো অভিজ্ঞ গোলকিপার। তাদের ছাড়িয়ে আমার গোলপোস্টের নিচে থাকাটা কঠিনই। যদি কোনও সময় সুযোগ আসে, তাহলে নিজেকে উজাড় করে দেবো। সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করবো।’
ফুটবল খেলার সুবাদে একটু একটু করে পরিবারের চেহারাও পাল্টে দিচ্ছেন মিতুল। আগে বাবা-মা জুম চাষ করলেও এখন সেখান থেকে সরে এসেছেন। মিতুল নিজেই বলেছেন, ‘আগে আমাদের পরিবার জুম চাষ করতো। সেটা কষ্ট সাপেক্ষ ব্যাপার। এখন ফুটবল খেলে আয় করি। সমতল ভূমিতে আমাদের জমি নেওয়া আছে, সেখানেই চাষ হয়। তাই পাহাড়ে জুম চাষের প্রয়োজন পড়ছে না। এছাড়া পরিবারে আগের চেয়ে সচ্ছলতা ফিরেছে।’
দেশের ফুটবলে রাঙ্গমাটির দুই ভাই অরুণ-বরুণ দেওয়ান ও কিংশুক চাকমার মতো নাম করতে চাইছেন মিতুল মারমা। জাতীয় দলের কোচ জেমি ডে ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি ফুটবলারের মধ্যে ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছেন। এখন বিলাইছড়ি থেকে উঠে আসা মিতুলের স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষা।