মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুর রহমান ১২ রবিউল আউয়ালকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়ে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এবছর থেকে দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হবে। মুসলিম বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর রবিউল আউয়াল মাসে ঈমানী চেতনার জয় ধ্বনী নিয়ে আমাদের মাঝে আগমন করে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পালন করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। যুগে যুগে বাতিলফিরকাদের শনাক্ত করার কিছু নিদর্শন ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সমাজেও বাতিলদের চেনার অন্যতম নিদর্শন হল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র বিরোধিতা করা। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র জন্ম ও ওফাত দিবস ১২ রবিউল আউয়াল মুসলমানদের কাছে এক পবিত্র দিন। এ দিনটি মুসলমানরা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হিসেবে পালন করেন। সরকারে দোআলম নুরে মোজাচ্ছম প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র পবিত্র শুভাগমনে খুশি উদযাপন করাটাই হচ্ছে ‘পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’। ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উদযাপন করা প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র আনুগত্যের বহি:প্রকাশ। মুসলিম সমাজ যুগ যুগ ধরে ১২ রবিউল আউয়ালের দিন নবী মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র জন্মদিন পালন করে আসছেন। এ উপলক্ষ্যে মিলাদ-মাহফিল, জিকির-আজকার, স্বাগত র্যালী ও জসনে জুলুসসহকারে শুভাগমন বার্তায় খুশি উদযাপন করা হয়। যা শরীয়ত সম্মত ও বৈধ, অতীব পুণ্যের কাজ। কেননা আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উম্মত তথা পুরো জগতবাসীর জন্য সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত।
যে নিয়ামতের কথা স্বয়ং আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনের সুরা ইউনুসের ৫৮ নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন এভাবে,“কুল বিফাদলিল্লাহি ওয়াবিরাহমাতিহি ফাবিজালিকা ফালইয়াফরাহু হুয়া খায়রুন মিম্মা ইয়াজমাউন” অর্থাৎ, হে হাবীব (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপনি বলুন ! আল্লাহরই অনুগ্রহ ও তাঁর (রহমত) দয়া প্রাপ্তিতে তারা যেন আনন্দ প্রকাশ করে। এটা তাদের সমস্ত ধন-দৌলত সঞ্চয় করা অপেক্ষা উত্তম”। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ‘রহমত’ দ্বারা প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বুঝানো হয়েছে। [সূত্র : ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতি (রহ.) কৃত বিশ্ববিখ্যাত তাফসিরগ্রন্থ আদ্দুররুল মনছুর]। যারপ্রেক্ষিতে মুসলিম সমাজ ১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পালন করেন। সর্বস্তরের মুসলিমজনতা বিশেষ করে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি অতীব গুরুত্বসহকারে উপলব্ধি করে এবছর থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পালনের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, নবীপ্রেমিক ও দেশপ্রেমিক সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি অজস্র শোকরিয়া ও অশেষ ধন্যবাদ। এটি বাংলাদেশ সরকারের প্রসংশনীয় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যারপরিপ্রেক্ষিতে দেশে প্রথম রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালিত হবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), যা বাংলাদেশের ইতিহাসে মাইলফলক। যেহেতু দিনটিকে জাতীয় দিবস ঘোষণা করেছেন, তাই অন্য সকল জাতীয় দিবসের মতো জাতীয় পতাকা উত্তোলনও এ দিনের প্রধান কর্মসূচি। সরকারিভাবে সকল সরকারি ভবনে আলোকসজ্জা, জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও আলোচনাসভার কর্মসূচি থাকবে। সকল সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে হবে। বিগত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দিবসটিতে বাংলাদেশের সব সরকারি বেসরকারি ভবন ও অফিস প্রাঙ্গনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এছাড়া বিদেশি কূটনৈতিক মিশন ও দূতাবাসগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। অবিলম্বে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পালন হচ্ছে জান্নাত লাভের মাধ্যম ও সাহাবায়ে কেরামের আমল। তাই পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পালন করা, শরীক-শামিল হওয়া প্রত্যেক ঈমানদার মুমিনের জন্য অতীব প্রয়োজন। সকল নবীপ্রেমিক, দেশপ্রেমিক যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় এ মহান উৎসব যাতে পালন করতে পারে সেদিকে সকলের সজাগদৃষ্টি ও সহযোগিতা একান্ত কাম্য।