বেলা সোয়া ১১টা, শনিবার। নিউমার্কেট মোড়, চট্টগ্রাম।
নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থান নিয়ে এক কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
সমাবেশে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, “যে অত্যাচার নির্যাতনের কথা বলেছি তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার চাই, তদন্ত চাই। যারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করার মাধ্যমে কঠোর শাস্তি দিক- এটি চাই। মিথ্যা অভিযোগে যারা গ্রেপ্তার তাদের কারাগার থেকে মুক্তি চাই। যারা হ্যাকার তাদের শাস্তির আওতায় আনা চাই।
“যদি সরকার দাবি না মানে কঠিন থেকে কঠিনতর কর্মসূচি ঘোষণা করব। প্রয়োজনে লং মার্চের মত কর্মমসূচি দিব। পায়ে হেঁটে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাব।”প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার সরকারের কোনো মন্ত্রী নেতাকে আমাদের আর বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। কারণ তারা যা বলেন তা করেন না, যা করেন তা বলেন না। সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষায় আপনি অনেকবার অনেক ভূমিকা রেখেছেন। উপর থেকে পানি ফেলেছেন কিন্তু সেই পানি নিচের দিকে দেখা আমরা পাইনি। কারণ আপনার দলের ভেতর দল আছে, আপনার প্রশাসনে পাকিস্তান আছে।”
“প্রধানমন্ত্রী চান সংখ্যালঘুরা শান্তিতে থাকুক। কিন্তু দলের কয়জন চান সে নিয়ে সন্দেহ আছে। সাম্প্রদায়িকতার ক্রমউত্থান বাংলাদেশকে গ্রাস করতে চায়। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে গ্রাস করতে চায়।”
হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা নূর হোসাইন কাসেমীকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাণা দাশগুপ্ত বলেন, “পরশু এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, মানবাধিকার বিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে সরকারকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। লালমনিরগাট ও কুমিল্লার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে যে কোনো ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে। সুনিপুন তদন্তের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, “আমাদের সংবিধানে যে পরিবর্তন এসেছে সেটিকে আমরা স্বাধীনতার চেতনায় ফেরাতে পারিনি। আজ রাজনীতি ও সমাজে সাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মানবিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙ্ক্খা থেকে আজ আমরা অনেক দূরে।
“এরকম বাংলাদেশ আমরা প্রত্যাশা করিনি। করোনাকালে সংখ্যালঘু ও আধিবাসীদের উপর নিপীড়ন বেড়েছে। মুক্তিযুদ্ধে ধর্মের ভেদাভেদ ছিল না। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে হবে।”
অধ্যাপক জিন বোধী ভিক্ষু বলেন, “আমরা ৭২ এর সংবিধানে ফিরতে চাই। আজ কেউ ভালো নেই। আপনারা কী আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছেন না? সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের উপর অবিচার হচ্ছে। নির্যাতন হামলার বিচার না হলে আমরা আপনাদের পাশ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হব।”
কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরিষদ নেতা চন্দন তালুকদার, শ্যামল কুমার পালিত, অশোক দাশ, ব্রহ্মচারী গদাধর দাশসহ পরিষদ নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিউমার্কেট মোড় থেকে কোতোয়ালীর মোড় হয়ে প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।