নিজস্ব প্রতিবেদক ব্যবসায়ীদের দাবী অনুযায়ী বাজারে ভোজ্যতেলের দাম লিটারপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধি কার্যকর হচ্ছে না। সমন্বিত ও অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত বাজারে ভোজ্যতেলের বর্তমান মূল্যই বহাল থাকবে।
বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগ) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
বৈঠকে দেশে বড় বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান টিকে গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপসহ বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি বিভাগ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (মূসক গোয়েন্দা ও পরিদর্শন) বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সফিকুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমানের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতিটি ১০ বছরের পুরোনো। এই পদ্ধতিটির সংশোধন ও হালনাগাদ করতেই আজকের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি, বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি আমরা অ্যানালাইসিস করেছি। এ বিষয়ের ওপর বিশেষজ্ঞরাও তাদের মতামত রেখেছেন।’
সফিকুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি বর্তমানে তেলের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতিটির আরও হালনাগাদ ও যুগোপযোগী করার সুযোগ রয়েছে। কারণ দশ বছর আগের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির সঙ্গে বর্তমান মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির বিভিন্ন ফ্যাক্টরগুলোতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এই সময়ে গ্যাসের মূল্যের পরিবর্তন হয়েছে। বিদ্যুতের মূল্যের পরিবর্তন হয়েছে। ডলারের দামও বেড়েছে। এ ছাড়া আমদানিসংক্রান্ত অনেক নিয়মকানুন আপডেট হয়েছে। আমরা দেখেছি মূল্য নির্ধারণের পুরোনো পদ্ধতিটিকে হালনাগাদ করা হলে সেখানে দামের ক্ষেত্রেও আরও সমন্বয় আনা সম্ভব।’
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে দেশে ভোজ্যতেল বাজারজাতকারী ব্যবসায়ীদের সমিতি ‘বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন’ কয়েক মাস ধরে তেলের দাম বাড়াতে চাচ্ছে। কোনও কোনও মাসে তিন দফা দাম বাড়ানোর প্রস্তাবও দিয়েছে তারা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, বর্তমান দাম অনুযায়ী তাদের লোকসান হচ্ছে। তবে সরকার দাম বাড়ানোর বিষয়ে এই মুহূর্তে কিছু ভাবছে না। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা একতরফা নতুন দাম ঠিক করে আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয়। তেল ভেদে লিটারে ৮ থেকে ১০ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল তারা। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে বৈঠক ডাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বর্তমানে লিটারপ্রতি বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬০ টাকা। এই তেলের দাম লিটারপ্রতি ৮ টাকা বাড়াতে প্রস্তাব করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। তাই হলে খুচরা বাজারে লিটারপ্রতি মূল্য দাঁড়াত ১৬৮ টাকা। মিলগেট মূল্য হতো ১৫৮ টাকা, আর পরিবেশক মূল্য দাঁড়াত ১৬২ টাকা।
সেই সঙ্গে খোলা সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ৯ টাকা এবং খোলা পাম অয়েলের দাম লিটারপ্রতি ১০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলেন ব্যবসায়ীরা।
তা কার্যকর হলে বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য হতো ১৪৫ টাকা; যার মিলগেট মূল্য দাঁড়াত ১৪২ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১৪৩ টাকা।
আর পাম অয়েলের খুচরা মূল্য হতো লিটারপ্রতি ১২৯ টাকা। মিলগেটে মূল্য দাঁড়াত ১২৬ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১২৭ টাকা।
ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে প্রায় ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা আছে, যার ৯০ শতাংশই আমদানি নির্ভর।