রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি( শাকিল মন্ডল) সারাদেশে একযোগে এক কোটি মানুষকে করোনার টিকা দেওয়ার লক্ষ্যে রাঙামাটিতেও অনুষ্ঠিত হয়েছে গণহারে কোভিড ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচি। এই কার্যক্রমের আওতায় টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে টিকা নিতে আসা মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের তথ্য মতে, একদিনেই জেলায় প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছে ২১হাজার ৬শত ৪৪জন। শনিবার সকালে রাঙামাটি পৌর এলাকার নয়টি ওয়ার্ডে ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে জিমনেসিয়াম ও মারী স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে সকালে ৯টা থেকে টিকা দেওয়া শুরু হলেও তার আগে থেকে টিকাপ্রত্যাশীদের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এতে টিকাকেন্দ্রে দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবকদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
টিকা নিতে আসা মাহবুব নামে একজন ব্যক্তি বলেন, সকালে তাড়াতাড়ি এসে আমি লাইনে দাঁড়িয়ে কোন কার্ড ছাড়া টিকা মারতে পেরেছি। ননাবী চাকমা নামে একজন বলেন, আমি লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্ট করে ধাক্কাধাক্কি করে জন্মনিবন্ধন দিয়ে সহজে টিকা নিয়েছি। খোরশেদ আলম নামে এক বয়স্ক ব্যক্তি বলেন, আগে তো অনলাইনে আবেদন করে কার্ড বের করে মেসেজ দিলে তারপরে টিকা নেওয়া যেত। কিন্তু আজকে নাকি গণহারে কোন কাগজ বা কার্ড ছাড়া টিকা নেওয়া যাবে তাই আমিও টিকা নিতে এসেছি। পিয়ন নামে এক ছাত্র বলেন, আজকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হবে শুনে খুব সকালে টিকা নিতে আছি। অনেক ভিড়ের মাঝে রোদে দাঁড়িয়ে কষ্ট করে হলেও টিকা নিতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
রেড ক্রিসেন্ট সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবক রানা দে জানান, সারা দেশে গণহারে টিকা দেওয়া শুরু হওয়ায় আগের চাইতে এখন টিকা কেন্দ্রে মানুষের ভিড় বাড়ছে। এখন এনআইডি, জন্মনিবন্ধন দিয়ে বা যাদের কোন কাগজপত্রও নাই তাদেরও এখন টিকা দেওয়া হচ্ছে। মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে একযোগে গণ হারে টিকাদান বাস্তবায়ন করতে রাঙামাটিবাসীর সুবিধার্থে পৌর এলাকার নয়টি ওয়ার্ডে ও স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় ১২- ১৭ বছর বয়সীদের মারী স্টেডিয়ামে এবং ১৮ উর্ধ্ব বয়সীদের জিমনেসিয়ামে টিকা প্রদান অনুষ্ঠিত হয়। এতে কোন কাগজপত্র ছাড়া সবাইকে গণহারে টিকা প্রদান করা হয়।
এদিকে টিকা কেন্দ্রে মানুষের এমন উপস্থিতি হতভাগ হয়েছেন পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর এবং সিভিল সার্জনও। এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি পৌরসভা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ফিরোজ আল মাহামুদ সোহেল বলেন, আমাদের জনগণের কাছ থেকে প্রত্যাশার থেকে অনেক বেশি সাড়া পেয়েছি। তবে প্রচারণাও আমরা এবং মেয়র, কাউন্সিলারগণ তৎপর ছিলেন। এছাড়া আমাদের মনে হয়েছে এবারে রেজিস্ট্রশনের ঝামেলা না থাকায় সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আমাদের ৯ ওয়ার্ডে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৭শ টিকা প্রদানের। আমরা ২৪শ ৮০ জনকে টিকা প্রদান করতে পেরেছি।
রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা বলেন, মানুষের এমন সাড়া পাওয়ায় আমি অভিভূত। এত মানুষ টিকা না নিয়ে ছিল, আর তারা স্বেচ্ছায় নিতে আসবে ভাবতেও পারিনি। তবে এ চিত্র শুধু রাঙামাটিতেই নয়, সারা দেশের। তিনি আরও বলেন, আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল আশা করছি সেটা পূরণ করতে না পারলেও কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবো। আপনারা জানেন যে এই এলাকা থেকে প্রায় ৫০ হাজারের অধিক মানুষ দেশের বিভিন্ন ইপিজেডে এ কর্মরত আছেন। জনসংখ্যা হিসাবে তারা রাঙামাটিতে ধরা আছেন, কিন্তু তারা অন্য জেলা থেকে টিকার আওতায় চলে আসলেও আমাদের গড় হিসাবে যুক্ত হচ্ছে না।
কেন এতো মানুষের সাড়া মিলেছে এমন প্রশ্ন সিভিল সার্জন বলেন, হয়তো সাধারণ মানুষ রেজিস্ট্রেশনটাকে ঝামেলা মনে করেছেন, আর কিছুটা অবহেলা এবং দুরের কেন্দ্র যাওয়ার অনিহা ছিল তাই এত দিন টিকা না নিয়ে ছিলেন। এবার বাড়ির পাশে নিবন্ধনহীন ভাবে টিকা নেয়ার সুযোগ পেয়ে তার তা লুফে নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, মানুষের এমন আগ্রহ দেখে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় এই গণটিকা কার্যক্রমেরর মেয়াদ আর দুই দিন বৃদ্ধি করেছেন। ফলে আগামী ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারিও রাঙামাটিতে গণটিকা কার্যক্রম চলবে। তিনি রাঙামাটিতো যারা এখনও প্রথম ডোজ টিকা নিতে পারেননি তারা যেন এই দুই দিনে নির্ধারিত কেন্দ্রে গিয়ে টিকা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছেন।