সত্যজিৎ চক্রবর্ত্তী বেকারত্ব! এটি সাধারণ কোনো শব্দ নয়। এটা একটা অঘোষিত সামাজিক অভিশাপ। স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী একজন বেকারই কেবল জানে এর তীব্রতা কতটুকু, এর যন্ত্রণা কতটা কষ্টদায়ক। পরিচিতিহীনতা (আইডেন্টিটি ক্রাইসিস) কতটা নির্মম মানসিক শাস্তি এটা কেবল ভুক্তভোগীই জানেন।
প্রথম শ্রেণী থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত (যদি কোনো সেশন জট না থাকে), তবে একজন শিক্ষার্থী তার জীবনের ১৬টি বছর একাডেমিক পড়াশুনায় শিক্ষিত হয়। কিন্তু ১৬ বছরের পড়াশুনা কিছুক্ষেত্রে ১৬ হাজার টাকা মাসিক ইনকামের নিশ্চয়তা দিতেও ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা যায়, স্বনামধন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের ৬৬ শতাংশ, অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশই বেকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম ২৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষ বেকার। এই তথ্য নিশ্চয় কোনো শিক্ষার্থীদের মাঝে আশা জাগানিয়া সংবাদ হবে না। বরং এটি সবাইকে হতাশ করবে।
টিভি টকশো, পত্রিকার কলাম, জার্নাল কিংবা গোলটেবিল বৈঠক সব জায়গাতেই বেকারত্ব নিয়ে কিংবা এর সমস্যা নিয়ে সবিস্তারে যেভাবে আলোচনা হয়, ঠিক সেভাবে এর সমাধান নিয়ে খুব একটা নজরকাড়া তেমন আলোচনা শোনাই যায় না। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং পেশা যথেষ্ট নজড় কেড়েছে বৈশ্বিকভাবেই। আর ফ্রিল্যান্সিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ২য়। তার মানে মোটাদাগে আপাতত এটা বলা যেতে পারে প্রযুক্তিগত এই বিদ্যা দেশের বেকারত্ব দূরীকরণে সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখতে পারে। এই পেশার প্রতি সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও সার্বিক সহযোগিতা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রযুক্তিগত শিক্ষায় উৎসাহ প্রদান, গণমাধ্যমের সঠিক প্রতিবেদন এই ফ্রিল্যান্সিংকে কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করছে।
সম্প্রতি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তির চান্স পেয়ে অনেক শিক্ষার্থীকে চিন্তিত হতে দেখা গেছে, ভর্তির টাকা যোগাড় করতে না পেরে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসব রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং সবচেয়ে বড় সমাধান এনে দিচ্ছে। একজন শিক্ষার্থী যদি পড়াশুনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারে তবে সে তার পড়াশুনার খরচও চালাতে পারছে, সে সাথে নিজের অবস্থানটাও পাকাপোক্ত করে নিতে পারছে ফ্রিল্যান্সিং জগতে। এতে করে ভবিষ্যতে বেকার থাকার শুন্য সমীকরণে নিজেকে নিয়ে যেতে পারছে।
ফ্রিল্যান্সিং শিখার এই উদ্যোগ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি এগিয়ে আসে তবে আমাদের আর গণমাধ্যমে এমন কোনো সংবাদ শুনতে হবে না, “টাকার অভাবে পড়াশুনা বন্ধ কিংবা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেও চাকরি না পেয়ে যুবকের আত্মহত্যা।” ফ্রিল্যান্সিং পেশার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, যেকোনো জায়গা থেকেই এটি করা যায়, যেকোনো সময়ে এটি করা যায়, এছাড়া ব্যক্তির স্বাধীনতা ও পছন্দ অনুযায়ী এটিকে যে কেউ মূলপেশা হিসেবেও নিতে পারে, আবার যে কেউ চাইলে মূল পেশার পাশাপাশি নিজেকে আরো স্বাবলম্বী করতে অতিরিক্ত আয়ের বৈধ মাধ্যম হিসেবে নিতে পারে।
আজকের সচেতনতাই পারে আগামীর একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে।
সত্যজিৎ চক্রবর্ত্তী
ক্যারিয়ার কনসালটেন্ট
প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ ক্যারিয়ার ক্লাব
চেয়ারম্যান, নিউক্লিয়াস গ্রুপ
লেখক, উদ্যোক্তা ও কর্পোরেট ট্রেইনার