বিশ্বকাপ জেতার পর কাতারের আমির তার শরীর থেকে নিজের কালো রংয়ের ‘বিশত’ খুলে মেসিকে পরিয়ে দিলেন। ব্যাপারটি দেখতে খুব সামান্য মনে হলেও এর পেছনে দারুন গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস রয়েছে।
যেকোন রংয়ের এই সেলাই করা বিশতকে আরবীতে আবাইয়া বলা হয়। হযরত ঈসা (আঃ) এর ভাষা ছিলো আরামিয়াক। তাঁর সময়ে ফিলিস্তিন এবং লেভান্ত অঞ্চলে আরামিয়াক ভাষায় এই চাঁদরকে “বিশত” বলা হত যা একটি পুরানো আক্কাদিয়ান ভাষা থেকে এসেছে এবং একই শব্দ সৌদি আরব, কাতার এবং আরব উপসাগরের লোকেরা আজও ব্যবহার করে। বিশত এর আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে “আভিজাত্য”!
কাতারের প্রিন্স এই বিশত মেসিকে পরিয়ে একজন রাষ্ট্রপ্রধানের তরফ থেকে সর্বোচ্চ সম্মান দেয়ার প্রতীক দিয়ে দিলেন। সাথে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে প্রশ্ন রেখে গেলেন এই পোশাকটি কী?
মেসিকে আবায়া লাগিয়ে একটি অতি চতুর ইসলামিক দাওয়াতী পদক্ষেপ নিয়েছেন কাতারের আমির।
তিনি হয়তো মনে করিয়ে দিতে চাইলেন, ইউরোপ উৎপত্তি না জেনেও শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিশত পরিধান করে আসছে, এবং সাথে এটিও বুঝিয়ে দিলেন যে আর্জেন্টিনিয়ানরা সিসিলির মুসলমানদের সাথে জেনেটিক্যালি যুক্ত!
মুসলমানরা চতুর্থ শতাব্দীতে আন্দালুসে পৌঁছে দক্ষিণ স্পেনে সেই যুগে বিশ্বের সেরা কর্ডোবা বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছিল। গ্রাজুয়েশন বা স্নাতক অনুষ্ঠানের সময় মুসলিম এবং সারা ইউরোপ থেকে আসা অমুসলিম ছাত্ররা একই আবায়া পরিধান করতো। এই ছাত্ররা তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবার সাথে আরব সংস্কৃতির অনুলিপি ‘আবায়া’ ইউরোপ থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এখন বাংলাদেশের গ্রাজুয়েশন উৎসবেও সব ছাত্ররা যে কালো চাদরটি পরিধান করে তার উৎপত্তি হাজার বছর আগের মুসলমানদের কর্ডোভা ইউনিভার্সিটি। এটিই মুসলিম আবায়া, এটিই বিশত।
প্রাচীন গ্রীক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস (খ্রিস্টপূর্ব ৪২৫) লিখেছেন, “আরব সৈন্যরা তাদের শরীরে বেল্ট বেঁধে আবায়া পরতো এবং তাদের হাতে থাকতো একটি ধনুক”।
নবী করীম (সা) একটি বাদামী রংয়ের আবায়া পরিধান করতেন, যা তিনি আওয়াইস আল কার্নি নামক একজন সাহাবীকে/(তাবি’ই)কে উপহার দিয়েছিলেন, তারপর প্রজন্মের পর প্রজন্ম হয়ে এটি আজ ইস্তাম্বুলের তোপকাপি প্রাসাদের মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হচ্ছে। আর্জেন্টিনার শতকরা ৬০ ভাগ জাতিগতভাবে ইতালীয় এবং ইতালির দক্ষিণে সিসিলিতে ৪৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মুসলিম উপস্থিতি ছিল! ডিএনএ পরীক্ষা প্রমাণ করেছে যে আর্জেন্টিয়ানরা আংশিকভাবে সেই মুসলমানদেরই বংশধর! অবিশ্যি এটিও মনে রাখতে হবে যে আমরা, আদমের সন্তান, সর্বদা কোন না কোন উপায়ে একসাথে সংযুক্ত থাকি।
ধন্যবাদ কাতারকে। ইতিহাসের সেরা বিশ্বকাপ উপহার দিয়ে আপনারা প্রত্যেক মুসলমানকে গর্বিত করেছেন। এবং শেষ মুহূর্তে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার মেসিকে একটি ঐতিহাসিক আবায়া পরিধান করিয়ে আধুনিক সভ্যতায় মুসলিম অবদানকে নতুন ভাবে পরিচয় করিয়ে দিলেন। কাতারের আমিরকে টুর্নামেন্টের সত্যিকারের বিজয়ী বললে অত্যুক্তি হবেনা।
আলহামদুলিল্লাহ।